শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর :
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পলি নেট হাউজ কৃষক ফজলুল হককে এনে দিয়েছে ব্যাপক সফলতা।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায়-২০২২ সালে উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামে কৃষক মো. ফজলুল হকের নিজস্ব ১০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তুলেন পলি নেট হাউস। এটি বাস্তবায়ন করে ঝিনাইগাতী কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় কৃষক মো. মতিউর রহমান (৩৮), আব্দুল কাদের (৩৫), শামীম মিয়া (৩৮),দেলোয়ার হোসেন (৩৮), লিটন মিয়া (৩৮), সাব্বির আহমেদ (৩০) ও শামীম মিয়া (৫০) জানান, সার ও বিষমুক্ত চারা নিজস্ব কোকোপিট দ্বারা উৎপাদন করায় সবার কাছে এর চাহিদা বাড়ছে বহুগুণ। প্রতিদিন তার পলি নেট হাউজ থেকে উন্নত জাতের দেশি ও হাইব্রিড এসব চারা বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষক মো. ফজলুল হক জানান, এই পলি নেট হাউজে শীত ও গ্রীষ্মকালীনসহ সব
ধরনের সবজি, ফুল ও ফলের চারা, উৎপাদন করে বিক্রির উপযোগী করে রাখা হয়। পলি নেট হাউজে রয়েছে উন্নত জাতের পার্পল কিং বেগুন, ময়ুর পংখী বেগুন, প্রীতম বেগুন ছাড়াও অন্যান্য বেগুন চারা। এছাড়াও আকাশি মরিচ, বিজলী প্লাস, ১৭শ এক, অগ্নিবীণা, কালমরিচ, হাইব্রিড জাতের বাবু পেঁপে, টপলেডি পেঁপে, গ্রিন লেডি পেঁপে, বিক্রম ও দেশি পেঁপে। আরও রয়েছে, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, করলা, চিচিঙ্গা, বারোমাসি সজিনা, তরমুজ, বিউটিফুল-২ ও ব্লাক বিউটি টমেটো। থাই পেয়ারা, এলোভ্যাড়া, সূর্যমুখী ফুল, ইনকাগাদা ফুল,
চায়না গাদা, কেলোন্ডোলা, স্টার, ডেন্টাজ, জারভেড়া, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, লিংকন গোলাপ, দেশী গোলাপ ও মিনি টগরসহ নানা ফুল ও ফল গাছের চারা। এখানে ফলের মধ্য মিয়াজাকি, আমেরিকান কিং, কাটিমন বারোমাসি, বারী ফোর, হিম সাগর, গৌরমতিসহ ১১ প্রকার উন্নত জাতের আম, ভিয়েতনাম ও বারী-১ জাতের মাল্টা। রঙিন জাম্বুরা, বল সুন্দরী বরই, জলপাই, কাঠাল, লিচু, পেয়ারা, বারী-১ জাতের লটকন, সিডলেস লেবু, স্টোবেরী, মরুভূমির ফল
সাম্মাম, তীন ফল, জায়তুন ফল, ডোরিয়ান, রামভুটান, এবোকাঠ, সুপারী, নারকেলসহ সকল ধরনের ফলের চারা পাওয়া যাচ্ছে এখানে। পলি নেট হাউজ সম্পন্ন প্লাস্টিকের ছাউনি থাকায় বৃষ্টি বা কুয়াশা সরাসরি ঢুকতে পারে না। ফলে সঠিক সময়ে চারাগুলো উৎপাদিত হচ্ছে। তাপ নিয়ন্ত্রণ আর পানির অপচয় ঠেকাতে এর ভেতরে চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে পানির ফকার। পলি নেট হাউজের পাশাপাশি, ২০২৩ সালে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সহযোগিতা ও পিদিম ফাউন্ডেশন বাস্তবায়নের উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের জাত সম্প্রসারণ ও বাজারজাতকরণ শীর্ষক ভ্যালু চেইন উপ প্রকল্প এর আওতায় তিনি গড়ে তোলেন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন কেন্দ্র।
প্রত্যেক মাস এ ভার্মি কম্পোস্ট থেকে ৩০-৪০ মণ সার উৎপাদন করা হয়। যা বাজার মূল্য ১৮ থেকে ২৪ হাজার টাকা। তবে নিজের কৃষিকাজে ব্যবহার করেও মাসে ১০-১৫ হাজার টাকার ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করা হয়। শীতকালীন নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি গত এই ৩ মাসে পলি নেট হাউজ, নার্সারি ও ভার্মি কম্পোস্ট থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকার ফুল,ফল ও সবজি চারা বিক্রি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন দিলদার জানান, পলিনেট হাউজ আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য কৃষি প্রযুক্তি। উন্নতমানের পলিথিন দ্বারা আবৃত চাষযোগ্য কৃষি ঘর। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি নিয়ন্ত্রণ, অত্যাধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনা, ক্ষতিকর পোকার প্রবেশ রুখে দিয়ে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের এক আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী উচ্চমূল্যের ফসল ফলানো যায়। এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নিরাপদ ও অক্ষত রাখা যায়। পলিনেট হাউজে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকায় ফল-ফসল ও সবজি চারা আগাম উৎপাদন করা সম্ভব।